Breaking News

ইচ্ছা আছিলো পড়ালেহা করে মায়ের কষ্ট দূর করমু

১১ বছরের রুবিনা। কাজ করে গৃহকর্মী হিসেবে। পরিবারের চার বোনের মধ্যে রুবিনা সবার বড়। দরিদ্রতার কারণে বছর পাঁচেক আগে জামালপুর থেকে ঢাকায় আসে তার পরিবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবা দুই বছর আগেই মারা গেছেন। বাবার মৃত্যুর পর জীবিকার তাগিদে মায়ের সঙ্গে অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ শুরু করে রুবিনা। এখন তার জীবনের গতিপথ বদলে গেছে অনেকখানি। দুমুঠো খাবারের জন্য তাকে সংগ্রাম করতে হয় প্রতিনিয়ত। তবুও তার ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে মায়ের কষ্ট দূর করার।

গত বছরে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে তার জীবন সংগ্রাম নিয়ে কথা হয় দেশের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা ইত্তেফাককের। পড়াশোনা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে রুবিনা জানায়, ‘পড়ালেহা করলে সংসার চলবো কেমনে? আর পড়ালেহা করতে ট্যাকা লাগবো। আমগো যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাতেই কষ্ট। কথা বলার একপর্যায়ে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে সে আরো জানায়, আমার খুব ইচ্ছা আছিলো পড়ালেহা করমু, মায়ের সব কষ্ট দূর করমু। ট্যাকা নাই তাই এখন মাইনসের বাসায় কাজ করি।’

কন্যাশিশুদের শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, আইনি সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিৎসা, বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালনে জাতিসংঘ ২০১২ সালের থেকে ১১ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু পালনের ঘোষণা দেয়।

বাংলাদেশের কন্যাশিশুদের শিক্ষার অধিকার ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষার বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হকের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রথমেই বাবা মাকে চিন্তা করতে হবে যে, ঘরে ছেলে সন্তানও তার সন্তান, নারী সন্তানও তার সন্তান। দুজন মানুষকেই সন্তান হিসেবে চিন্তা করতে হবে। আমাদের ভাবনার মধ্যে পরিবর্তন আনা এবং সন্তানকে লালন-পালন করে দেশের জন্য শক্তিশালী নাগরিক তৈরি করা। তবে কন্যা সন্তানকে যেভাবে আমরা বঞ্চনার শিকার করি সেখান থেকে তাদের রক্ষা করা দরকার। তারা যেন কোনো ধরনের নিরাপত্তা হীনতার শিকার না হয়। কন্যা সন্তান নিয়ে সামাজিক যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেটার পরিবর্তন আনা। কন্যা সন্তানই হতে পারে আমাদের দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, কারণ তারা পৃথিবীতে আরেকটা মানুষ আনেন।’

কন্যাশিশুদের শিক্ষার অধিকার প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, কন্যা বা অন্য অনেক শিশুরা পড়াশোনা থেকে বিরত। এদের একটা সংখ্যা নিশ্চয়ই আছে। এটার প্রেক্ষাপট একটাই, শিক্ষার যে মূল্যবোধ, অর্থাৎ শিক্ষা যে মানুষের জীবনকে পাল্টে দিতে পারে, এটাই অনেকে বোঝেন না। মানুষের রিয়েলাইজেশনের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষা যে মানুষের দরকার এবং এই শিক্ষা যে তাকে অনেক বেশি রিটার্ন দিতে পারে, সেই জায়গাটা তৈরি করতে হবে। শিক্ষার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন এবং সমাজে ইমেজ তৈরি করা, সেই জায়গাটা সময়সাপেক্ষ। আর এই সময়ের যে ইনভেস্টমেন্ট, সেটাতে অনেকে নারাজ। শিক্ষার মূল্যবোধ না থাকায় এবং দরিদ্রতার কারণে অনেকে তার সন্তানকে তাৎক্ষণিক উপার্জনের জন্য কাজে লাগিয়ে দেন। মানুষের অসংখ্য চাহিদার পাশে এমন অনেক শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী লিপি আক্তার বলেন, সমাজের সুবিধা বঞ্চিত কন্যা শিশুরা স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অনেক দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। দায়িত্বশীল শ্রেণির উচিত এই বৈষম্যটা দূর করা, যাতে সব শ্রেণির কন্যা শিশুরা সমান তালে এগিয়ে যেতে পারে। আর সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে তার মত কিছুটা হলেও দায়িত্ব পালন করে তাহলে তারা কিছুটা হলেও সুন্দর জীবন পেত।

About Atn24news

Check Also

প্রত্যেক বিবাহিত পুরুষকে অবশ্যই লবঙ্গ খেতে হবে, কারণ অজানা থাকলে পড়ুন

অনেক সময় সর্দি বা গলাব্যথা হলে লবঙ্গ চিবিয়ে খেতে বলা হয়। লবঙ্গের তেলও দাঁতের ব্যথায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *