শরীরের অন্দরে কোনো অসুখ জন্ম নিলে তা বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। বিশেষ করে কিডনিতে সমস্যা তৈরি হলে তা ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। কিডনির অসুখকে নীরব ঘাতকও বলা হয়। বিকল হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো নোটিশ না দিয়েই কাজ চালিয়ে যাবে। চুপিসারে এই রোগ আমাদের শরীরে বাসা বেঁধে আমাদের শেষ করে দেয়।
শরীরের ভেতরে এক ধরনের ফিল্টার হিসেবে কাজ করে কিডনি—রক্ত পরিশোধন করে, টক্সিন বা বর্জ্য বাইরে বের করে, লবণের ভারসাম্য ঠিক রাখে, এমনকি রক্ত তৈরি করতেও সাহায্য করে। কিন্তু কিডনি যদি ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে আমাদের শরীর আগেভাগেই কিছু ইশারা দিতে শুরু করে। কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখে বুঝে নিতে পারেন আপনার কিডনির সুস্থ আছে কি না। চলুন, জেনে নিই—
সবসময় দুর্বল আর ক্লান্ত লাগা
কিডনি যদি রক্ত ঠিকমতো ফিল্টার করতে না পারে, তাহলে শরীরে বিষাক্ত টক্সিন জমতে থাকে। এতে আপনি সবসময় ক্লান্ত লাগতে পারেন, মাথা ভার মনে হয়, কাজকর্মে মন বসে না। অনেক সময় রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া)-ও এর পেছনে কাজ করে।
ঘুম ঠিকমতো না হওয়া
কিডনি যখন ঠিকভাবে টক্সিন ফিল্টার করতে পারে না, তখন সেই টক্সিন রক্তেই থেকে যায় ফলে ঘুমের সমস্যা হয়। স্থূলতা ও ঘুমের ব্যাঘাত—দুটোই দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে।
ত্বক শুষ্ক ও ফেটে যাওয়া
কিডনি খনিজ লবণের ভারসাম্য রাখে, হাড়কে মজবুত রাখে। যখন এগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ আর ফাটতে শুরু করে। এটা অ্যাডভান্স কিডনি রোগের ইশারাও হতে পারে।
ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া
বিশেষ করে রাতে যদি বারবার প্রস্রাবের বেগ পায়, তাহলে সেটা কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে। কিডনির ছাঁকনি (ফিল্টার) নষ্ট হয়ে গেলে এমন হয়। তবে ইউরিন ইনফেকশন বা প্রোস্টেট বড় হওয়ায়ও এমন হতে পারে।
প্রস্রাবে রক্ত দেখা
সুস্থ কিডনি রক্তে থাকা রক্তকণিকাকে শরীরে রাখে। কিন্তু কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্তকণিকা প্রস্রাবে চলে আসে। এটা কিডনি রোগের পাশাপাশি হতে পারে টিউমার, কিডনি পাথর বা সংক্রমণের লক্ষণ।
প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা বা বাবল হওয়া
যদি প্রস্রাবে ডিমের মতো ফেনা বা বাবল হয়, তাহলে ধরে নিতে পারেন—প্রোটিন লিক হচ্ছে। এর মানে কিডনির ছাঁকনি ক্ষতিগ্রস্ত, এবং শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছে।
চোখের নিচে ফুলে যাওয়া
চোখের নিচে বা চারপাশে হঠাৎ ফুলে যাওয়ার অর্থ হতে পারে—বেশি পরিমাণ প্রোটিন প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছে, এবং কিডনি এই লিক বন্ধ করতে পারছে না।
পা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া
কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে সোডিয়াম জমে গিয়ে পানি আটকে রাখে। এতে পা ও গোড়ালি ফুলে যায়। তবে এই লক্ষণ হৃদরোগ, লিভার সমস্যা কিংবা পায়ের শিরার দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণেও হতে পারে।
কী করবেন?
আপনি যদি এসব লক্ষণের এক বা একাধিকটি নিজের বা পরিচিত কারও মধ্যে দেখতে পান, তাহলে দেরি না করে ডাক্তার দেখান। সাধারণ কয়েকটি পরীক্ষা যেমন— ব্লাড টেস্ট (Creatinine, Urea), ইউরিন টেস্ট (Protein, RBC), আলট্রাসনোগ্রাম।
এইগুলো করলেই অনেক কিছু বোঝা যায়।
কিডনি রোগ শুরুতে নীরব থাকে, কিন্তু একবার মারাত্মক হয়ে গেলে তা শরীরের অন্য সব অঙ্গের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই সময়মতো লক্ষণগুলো চিনে নেওয়াই হলো সবচেয়ে বড় সাবধানতা।
শরীরের ইশারাগুলোকে গুরুত্ব দিন, নিয়মিত পরীক্ষা করান, আর সুস্থ থাকুন।
আরটিভি/একে