শক্তি বৃদ্ধির ফল হিসেবে কলার জনপ্রিয়তা বহু পুরনো। সকালে তাড়াহুড়ো করে নাশতায় কিংবা ব্যায়ামের আগে দ্রুত শক্তির জোগান দিতে এই ফলের জুড়ি নেই। তবে চিকিৎসক ডা. তরং কৃষ্ণর মতে, কলার গুণ কেবল শক্তি দেওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিদিন মাত্র দুইটি কলা খাওয়া দেহকে এমন কিছু প্রাণঘাতী রোগ থেকেও রক্ষা করতে পারে।
যে প্রাণঘাতী রোগের মধ্যে রয়েছে পেটের আলসার এমনকি পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকিও। সহজ এই ফলটির ভেতরে লুকিয়ে আছে দেহের জন্য এক অনন্য সুরক্ষা বলয়।
পাকস্থলীর প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ
ডা. কৃষ্ণ জানান, কলায় এমন কিছু প্রাকৃতিক যৌগ রয়েছে যা পাকস্থলীর প্রতিরক্ষামূলক আস্তরণকে মজবুত করে। এই আস্তরণ শরীরকে অ্যাসিড ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এমনই একটি ব্যাকটেরিয়া হলো হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি (H. pylori), যা আলসারের মূল কারণ হিসেবে পরিচিত এবং দীর্ঘমেয়াদে পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত কলা খেলে এই ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা কমে যায়, ফলে হজমনালী পায় প্রাকৃতিক সুরক্ষা।
ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের শক্তি
কলা ভরপুর থাকে ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে, যা দেহে ছোট ছোট সৈনিকের মতো কাজ করে। এই যৌগগুলো প্রদাহ প্রতিরোধ করে এবং অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে কোষগুলোকে রক্ষা করে, যা অনেক দীর্ঘমেয়াদি রোগের অন্যতম কারণ। ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল নিস্ক্রিয় করে কলা শুধু হজমনালীর জ্বালাপোড়া কমায় না, বরং ভেতরের টিস্যুগুলোকেও রাখে সুস্থ ও মজবুত।
দেহের ভেতরে সুরক্ষা দেয়াল তৈরি করে কলা
ডা. কৃষ্ণ ব্যাখ্যা করেন, কলা পাকস্থলীতে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা (মিউকাস) উৎপাদনে সহায়তা করে। এই শ্লেষ্মা এক ধরনের নরম সুরক্ষা আবরণ হিসেবে কাজ করে, যা অ্যাসিডকে সরাসরি পাকস্থলীর প্রাচীরের সংস্পর্শে আসতে বাধা দেয়। এভাবেই কলা আলসারকে প্রশমিত করে এবং তা আরও বাড়তে বাধা দেয়। সহজভাবে বললে, কলা প্রাকৃতিক উপায়ে দেহের ভেতরে তৈরি করে এক অদৃশ্য নিরাপত্তা আবরণ।
শুধু সুরক্ষা নয়, আরও অনেক উপকারিতা
কলা শুধু পাকস্থলীকেই নয়, বরং সার্বিক হজম প্রক্রিয়াকেও উন্নত করে। এতে থাকা প্রিবায়োটিক ফাইবার অন্ত্রের ভেতরে ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়। এতে হজম সহজ হয় এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। অন্যদিকে, কলায় থাকা প্রাকৃতিক চিনির উপাদান শক্তি দেয় ধীরে ও স্থায়ীভাবে, ফলে রক্তে শর্করার হঠাৎ ওঠানামা হয় না। তাই এটি প্রকৃতির সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ফলগুলোর একটি।
স্বাস্থ্যের যত্নে সবচেয়ে সহজ উপায়
দেখতে সাধারণ হলেও কলার স্বাস্থ্যগুণ অসাধারণ। দামেও সাশ্রয়ী, পাওয়া যায় সহজে, আর উপযোগী সব বয়সের মানুষের জন্য। স্মুদিতে মিশিয়ে খান বা সোজা খেয়ে ফেলুন—প্রতিদিনের এই সহজ অভ্যাস শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নিঃশব্দে মজবুত করে। প্রমাণ করে দেয়, কখনও কখনও সবচেয়ে শক্তিশালী স্বাস্থ্যরক্ষক লুকিয়ে থাকে প্রকৃতির সবচেয়ে সাধারণ উপহারের মধ্যেই।
My Blog My WordPress Blog